Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
সিংগাইরে একজন কচু চাষীর সফলতার গল্প
ছবি
ডাউনলোড

মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক পেশায় একজন ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষক।  সিংগাইর  উপজেলার দাশেরহাটি গ্রামে তার নিবাস।  ইমামতির পাশাপাশি অবসর সময়ে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেন তিনি ও তার ভাই আলমগীর হোসেন। কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে তার ছিল ব্যাপক আগ্রহ। এই বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ নিতে নিয়মিত কৃষি বিভাগের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে পরামর্শ গ্রহন করে শুরু করেছিলেন লতিকচু ও পানিকচুর আবাদ। বর্তমানে তিনি একজন সফল কচুর বীজ চারা উৎপাদনকারী এবং চারা বিক্রেতা। কচুর বীজ চারা উৎপাদন ও বিক্রি এবং লতি ও কচুর কান্ড বিক্রি করে ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গুরুত¦পূর্ণ ও জনপ্রিয় একটি প্রকল্প কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প যা কন্দাল ফসলের পুষ্টিগুন ও উচ্চমূল্য বিবেচনায় লতিকচু, পানিকচু, মুখীকচু, গোল আলু ও মিষ্টি আলুর আধুনিক প্রযুক্তিসমূহ সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছর হতে  সিংগাইর উপজেলায় এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয় । লতিকচু ও পানিকচুর প্রদর্শনী, মাঠদিবস ও কৃষক প্রশিক্ষণ বরাদ্ধ আসলে আগ্রহী কৃষকদের আধুনিক মাল্টিমিডিয়ায় ভিডিও এবং পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। আব্দুর রাজ্জাক প্রশিক্ষণ গ্রহন করে কচু চাষে আরও উৎসাহী হন এবং  কৃষি অফিস থেকে তাকে ২০ শতকের একটি লতিকচুর প্রদর্শনী দেওয়া হয়। প্রকল্প থেকে ৩০০০ টি চারা ও প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক সরবরাহ করা হয়।  তিনি উদ্বুদ্ধ হয়ে তার ভাই আলমগীর হোসেন এর সহযোগিতায় আরও ৩০ শতক জমিতে লতিকচু ও পানিকচু আবাদ করেন। চারা রোপনের ২ মাস পর  থেকে লতি বিক্রি শুরু করেন এবং জুলাই মাস পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার টাকা মূল্যের  লতি এবং ১০ হাজার টাকা মূল্যের  কচু বিক্রি করেন। কচুর ফলন দেখে ১.৫ লাখ টাকা মুনাফা অর্জনের আশাবাদী ছিলেন।

কিনÍু জুলাই মাসের শেষের দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যার আক্রমনে প্রদর্শনীসহ ৫০ শতক কচুক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়। এতে আব্দুর রাজ্জাক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও থেমে যাননি। কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রদর্শনী থেকে গুড়ি বীজ চারা সংগ্রহ করে উঁচু জমিতে স্থানাস্তর করে এবং চারা উৎপাদনের সিদ্ধানÍ নেন। আগষ্ট মাসের শেষে বন্যার পানি নেমে গেলে কচুর বীজ চারা বিক্রি শুরু করেন। এই সময় কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প থেকে খরিপ-২ মৌসুমের প্রদর্শনী, মাঠদিবস ও কৃষক প্রশিক্ষণ বরাদ্ধ আসলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিবেচনায় আব্দুর রাজ্জাক এর ভাই আলমগীর হোসেনকে ২০ শতকের একটি লতিকচুর প্রদর্শনী দেওয়া হয়। প্রকল্প থেকে ৩০০০ টি চারা ও প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক সরবরাহ করা হয়।  বন্যার পানি নেমে গেলে আব্দুর রাজ্জাক তার ভাই আলমগীর হোসেন এর সহযোগিতায় ১৫ বিঘা জমিতে বীজ চারা উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন জেলা থেকে জনপ্রিয় ও উচ্চফলনশীল জাতের বীজ চারা সংগ্রহ করে ১৫ বিঘা জমিকে বিশাল এক সংগ্রহশালায় পরিণত করেন। তার সংগ্রহে রয়েছে থাইল্যান্ডের বারমাসি  ফেমাস কচু, লতিরাজ মোথাকচু, মোথাকচু ও লতিরাজ।

কচুর বীজ চারা উৎপাদন ও বিক্রি করে আব্দুর রাজ্জাক  প্রায় ২ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করেন। কচুর বীজ চারা উৎপাদনে লাভবান হয়ে সারাদেশে বিস্তারের লক্ষ্যে খুলে ফেলেন নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল ইসলামীয়া কৃষি। সারাদেশে তার বিশাল সংগ্রহশালার কথা ছড়িয়ে পড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে কচুর বীজ চারার অর্ডার আসতে থাকে। আব্দুর রাজ্জাক  জানান, এই পর্যন্ত প্রায় এক লাখ চারা সরবরাহ করা হয়। যার মধ্যে নাটোরের সবুজ নিয়েছেন ৫০,০০০ টি চারা, রাজশাহীর আব্দুল কুদ্দুস নিয়েছেন ৬০০০টি চারা, হবিগঞ্জ থেকে সুজন মিয়া নেন ৩০০০ টি চারা, শেরপুর থেকে ফজলুর রহমান নেন ৫৫০০টি চারা। শুধু তাই নয়, সাভার, মানিকগঞ্জ সদর ও হরিরামপুর উপজেলায় কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পসহ আরও অন্যান্য প্রকল্পের প্রদর্শনী বাসÍবায়নের জন্য আব্দুর রাজ্জাক চারা সরবরাহ করেন।

আব্দুর রাজ্জাক কচু চাষে সফলতা পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। ভবিষ্যতে তিনি দেশের বাইরে কচুর বীজ চারা রপ্তানী করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিংগাইর মানিকগঞ্জ এর প্রতি বিশেষ ভাবে কৃতঞ্জতা প্রকাশ করেন। পরিশেষে কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এহেন উন্নয়নমূলক কার্যের সমৃদ্ধি কামনা করে সংশ্লিষ্ট সকলের উত্তর উত্তর সফলতা কামনা করে এমন কার্যক্রম ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।