Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
সেলিনা আক্তার.একজন সফল উদ্যোক্তা
ছবি
ডাউনলোড

কোভিড -১৯ মহামারীতে সারা বিশ্ব আজ দিশেহারা,বাংলাদেশকেও কাঁপিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এর ভয়াবহতা। কিন্তু কোভিড-১৯ কেও ছাপিয়ে গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছিল গতবছরের দীর্ঘ সময় ব্যাপী অবস্থানরত ভয়াবহ বন্যা।

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের খান বানিয়ারা গ্রামে গড়ে উঠেছে প্রবীণদের জন্য একটি সমন্বিত সেবাকেন্দ্র (প্রবীণনিবাস) “সুবার্তা ট্রাস্ট”। এর চারপাশ ঘিরে চাষাবাদের জন্য রয়েছে প্রায় ৩০ বিঘা জমি। ২০২০ সালের ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে যায় সম্পূর্ণ ফসলের জমি,পরিণত হয় এক আবর্জনার স্তুপে। সে সময় প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা সেলিনা আক্তার অনেকটা দিশেহারা অবস্থায় দ্বারগ্রস্থ হন উপজেলা কৃষি অফিস সিংগাইরের।উপজেলা কৃষি অফিসার টিপু সুলতান তার সহকর্মীদের নিয়ে সরজমিনে প্রতিষ্ঠানটির  একরুণ অবস্থা পরিদর্শন করেন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চলমান প্রকল্প উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনায় নিরাপদ ফল ও সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ আওতায় প্রতিষ্ঠানটিকে সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন। জৈব কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিরাপদ সবজি চাষের কৌশল রপ্ত করা সেলিনা আক্তারের অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল। উপজেলা কৃষি অফিস তাকে এবং প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মচারিদের উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনায় নিরাপদ ফল ও সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ প্রকল্পের আওতায় হাতে কলমে প্রশিক্ষন দেয়। উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনায় বসতবাড়িতে সবজি উৎপাদনের জন্য  প্রতিষ্ঠানটিকে একটি প্রদশনীও দেয়া হয়। ফলে দ্বিগুণ আগ্রহ নিয়ে তারা শুরু করে কর্মযজ্ঞ।প্রকল্পের আওতায় ক্রমে পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে জমিতে লাগানো শুরু করে বাধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, টমেটো, বেগুন, লালশাক, পালং শাক, লেটুস, ধনে পাতাসহ অন্যান্য সবজি। উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনায় নিরাপদ সবজি চাষের উদ্দেশ্য মাথায় রেখে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে উপজেলা কৃষি অফিসের তত্তাবধায়নে তৈরি করেন বিভিন্ন জৈব সার, জৈব বালাইনাশক। এছাড়াও উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে দেয়া হয় ফেরোমন ট্র্যাপ, বিভিন্ন রঙের স্টিকি ট্র্যাপ যাতে তারা পরিবেশ বান্ধব ও কার্যকরী উপায়ে বিভিন্ন পোকা মাকড়সহ অন্যান্য রোগবালাই নিয়ন্ত্রন করতে পারে। অবশেষে সফলতার মুখ দেখে সুবার্তা। নিরাপদ শাক সবজিতে সুবার্তার প্রাঙ্গন হয়ে উঠে পরিপূর্ণ।

 কৃষি মন্ত্রনালয়ের উপসচিব জনাব মোঃ জসিম উদ্দিন, কর্মসূচীটির পরিচালক রাজু আহমেদ, কৃষি সম্প্রসারণ অদিদপ্তর মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত উপপরিচালক শাহজাহান আলী বিশ্বাস, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঢাকা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক বশির আহমেদ সরকার সহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এই প্রদর্শনী, তার এই সাফল্য দেখতে বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শনে আসেন। আশাতীত ফলনে বাজারজাতকরণের উৎসাহ দেন প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা সেলিনা আক্তারকে। তার সাফল্যের এই ধারাবাহিকতাকে আরো এগিয়ে নিতে উপজেলা কৃষি অফিসার টিপু সুলতানের সহায়তায়  উত্তম কৃষি নিরাপদ ফল ও সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ কর্মসূচীর আওতায় ঢাকার খামারবাড়িতে গড়ে ওঠা নিরাপদ সবজি বাজার “কৃষকের বাজার” এ সবজি বিক্রি করার সুযোগ পায় সুবার্তা। এভাবে সেলিনার ওল্ড এইজ হোমটি চালানোর জন্য থেমে থাকা একটি চাকা আবার চলতে শুরু করে।

পরবর্তীতে লাগাতার সহযোগিতা পেয়ে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে এর ১২০ জন বাসিন্দার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার প্রয়োজনীয় সবজি চাহিদা পূরণ করেও স্থানীয় বাজারে প্রতি মাসে  প্রায় ৫০ হাজার টাকার এবং খামারবাড়ির “কৃষকের বাজার” এ  প্রায় ৬০ হাজার সবজি বিক্রি করছেন। সম্পূর্ণ বানিজ্যিকভাবে নিরাপদ সবজি চাষ ছাড়াও ছোট একটি ডেইরি ফারম,হাস মুরগীর চাষ সহ একটি সমন্বিত খামার গড়ে তুলতে চান সেলিনা। উপজেলা কৃষি অফিসারের সহায়তায়   ইতিমধ্যেই সেখানে একটি জৈব সারের কারখানা গড়ে উঠেছে। সিংগাইর অঞ্চলে জৈবসার দিয়ে চুক্তিভিত্তিক একটি কৃষক কমিউনিটি গড়ে তুলতে চান তিনি। এছাড়াও সেখানে তিনি একটি ছোট আকারের কুল চেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমও গড়ে তুলতে চান,এ সম্পর্কে তিনি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ইতমধ্যে প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেছেন। সেলিনা আক্তা্রের মতে  উপজেলা কৃষি অফিস তথা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তা ছাড়া “ সুবার্তা”র এতদূর এগুনো সম্ভব হতো না।